পরিসংখ্যানের সুবিধা, অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর।

পরিসংখ্যানের সুবিধা, অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর।

ভূমিকা:- পরিসংখ্যান ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে শুরু হলেও বর্তমানে পরিসংখ্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে সর্বত্র আত্মপ্রকাশ করেছে। কোনো বিষয়ে অনুসন্ধান করাই পরিসংখ্যানের এখন কাজ। Statistica as the political sciences of the serveral countries ১৭৪৯ খ্রি গডফ্রিন্ড জাকেন ওয়াল সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ Academic discipline হিসেবে Statistics শব্দটি ব্যবহার ফরেন। বর্তমানে গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ করে সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য কারণ পরিসংখ্যান ও গবেষণা ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত।

পরিসংখ্যানের সুবিধা, অসুবিধাসমূহ আলোচনা কর

সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যানের সুবিধা:

নিম্নে পরিসংখ্যানের সুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো।

১. উপাত্ত সংগ্রহঃ

পরিসংখ্যানিক প্রক্রিয়ার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো উপাত্ত সংগ্রহ করা। উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়। প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত তথ্য হতে অর্থাৎ, প্রাথমিক বা গৌণ উৎস হতে উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়।

২. তথ্যাবলির উপস্থাপনঃ

পরিসংখ্যানের অন্যতম কাজ হলো সংগৃহীত সংখ্যাত্মক তথ্যকে লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা। কেননা, লেখচিত্রের মাধ্যমে একদিকে যেমন উপস্থাপিত তথ্যের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুট হয় অপর দিকে তেমনি একাধিক সংগৃহীত সংখ্যাত্মক তথ্যকে লেখচিত্রের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

৩. তথ্যসমূহ সরলীকরণেঃ

তথ্যবিশ্বের সবকিছু অবলোকন করে মন্তব্য করা নিতান্ত কঠিন। এক্ষেত্রে পরিসংখ্যান তথা বিশ্ব হতে তথ্য সম্মগ্রহ করে সেটিকে তালিকা, চিত্র ও লেখের মাধ্যমে সহজবোধ্য করে তোলে। এজনা গড় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- ১০০ জন ছাত্রের নম্বর না জানার চেয়ে তাদের গড় নম্বর মনে রাখা সহজ।

৪. তথ্য বিশ্লেষণ:

সাজানো তথ্য সারি হতে ফলাফল বা ঘটনা নিরূপণে তা বিশ্লেষণ করার দরকার হয়। এজন্য পরিসংখ্যানের অন্যতম কাজ হলো কতিপয় তাত্ত্বিক পরীক্ষার সাহায্যে সংগৃহীত তথ্যাবলি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

৫. তুলনায় সহায়কঃ

পরিসংখ্যান দুই বা ততোধিক রাশির মধ্যে তুলনা করতে সহায়তা করে থাকে। সাধারণত সময় ও স্থান ভেদে বিভিন্ন তথ্যের মধ্যে এ তুলনা করা হয়। মূলত পরিসংখ্যানের প্রধান কাজ হলো অতীত ও বর্তমান ফলাফলের মধ্যে তুলনা করে তথ্য প্রদান করা।

৬. তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রঃ

পরিসংখ্যান শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ করে না বরং সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত হতে সিদ্ধান্ত ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। সংগৃখীত তথ্যের সুশৃঙ্খল বস্তুনিষ্ঠ ও গুণনীয়ক ধারণা প্রদান, অনুমান যাচাই, তত্ত্ব গঠনের লক্ষ্যে তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রভৃতি কাজে সহায়তা করে থাকে।

৭. অভিজ্ঞতা বৃদ্ধিকরণঃ

পরিসংখ্যান তথ্যমালা প্রক্রিয়াজাত করণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুনিপুণ অভিজ্ঞতায় পরিচয় দেয়। যে কেউ সহজেই অনুমিত হাত সক্ষম হতে পারে এমন তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে থাকে। তাই মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধিতে এ শাস্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. পরিসংখ্যান বৈজ্ঞানিক সূত্র প্রমাণঃ

পরিসংখ্যান পদ্ধতি কার্যকর ও সঠিকভাবে বৈজ্ঞানিক সূত্র প্রমাণ করে থাকে। যে কোনো ধরনের গবেষণা ও প্রকল্পের কাজের জন্য পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি অপরিহার্য আর এটাই সে প্রকল্প ও গবেষণার সফলতা ও বিফলতা নির্ধারণ কয়ে দেয় যথাযথ সূত্র প্রয়োগের মাধ্যমে।

৯. ভবিষ্যদ্বাণীকরণের ক্ষেত্রঃ

জ্ঞাত তথ্যের সাহায্যে। ভবিষ্যতের অজ্ঞাত বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে Statement প্রদানের ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। এটি ভবিষ্যৎ বিষয়ের প্রতি উপযুক্ত কারণ ও যুক্তিসহ ভবিযাদ্বাণী দিয়ে থাকে। যা ভবিষ্যদ্বাণীকরণের ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ।

১০. শ্রেণিবদ্ধকরণ ও সারণিবদ্ধকরণঃ

সংগৃহীত তথ্য অধিকাংশ সময়ই অবিন্যস্ত আকারে আসে যা হতে সঠিক তথ্য বের করা কষ্টকর হয়। তাই সংগৃহীত উগাত্তকে বৈশিষ্ট। অনুসারে শ্রেণিবদ্ধকরণ ও সারণিবদ্ধকরণ করতে হয়।

সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যানের অসুবিধাঃ

পরিসংখ্যানের নানাবিধ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু সীমাবদ্ধতারয়েছে। পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতা বা অসুবধিাগুলি হলো-

১. সঠিক ফলাফল প্রদানে ব্যর্থতাঃ

পরিসংখ্যানিক উপাত্ত। সঠিক না হলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না। উপাত্ত সংগ্রহের সতর্কতা ও দক্ষতার অভাবে অনেক ভুল তথ্য প্রকাশিত হয়।

২. পরিবর্তনশীলতা:

পরিসংখ্যানিক তথ্য পরিবর্তনশীল। পরিসংখ্যান দ্বারা সবসময় এই ফল পাওয়া সম্ভব না।

৩. গুণবাচক বৈশিষ্ট্য বহির্ভূতঃ

পরিসংখ্যান কোনো বিষয়ের গুণবাচক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে পারে না। যেমন কোনো অঞ্চলের মানুষের স্বভাব চরিত্র, দক্ষতা প্রভৃতি পরিসংখ্যানে প্রকাশ করা যায় না।

৪. রাশি তথ্যের বহুলতাঃ

পরিসংখ্যান কোনো একক তথ্যের কার্যপ্রণালি নয়। অর্থাৎ, কোনো বিষয় সম্পর্কে একটিমাত্র তথ্য নিয়েই এ বিজ্ঞান কাজ করতে পারে না। এর কার্যক্রমে অনেক তথ্য সন্নিবেশিত হয়।

৫. স্বতন্ত্রভাবে একটি একক আলোচনা করে নাঃ

সমষ্টির অন্তর্ভুক্ত বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনার উশর কোনো ধারণা দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান ব্যর্থ। সুতরাং বলা যায় যে, পরিসংখ্যান স্বতন্ত্রভাবে কোনো দফা বা ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করে না।

৬. পরিসংখ্যানিক পদ্ধতিসমূহ গড়ে সত্যঃ

পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত বিষয়সমূহ অনুমান বা সম্ভাবনাময় ঘটনার উপাত্তসমূহের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং, পরিসংখ্যানিক পদ্ধতিসমূহ গড়ে সত্য এবং যে কোনো ঘটনার উপর মোটামুটি একটি ধারণা দিতে পারে।

৭. উদ্দেশ্যমূলক অপব্যবহারঃ

উদ্দেশ্যমূলক অপব্যবহার পরিসংখ্যানকে ভুল পথে পরিচালিত করে। সংগৃহীত তথ্যের উদ্দেশ্যের ভিন্নতা ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে।

৮. উপাত্তের পুরো রহস্য উদঘাটন করে নাঃ

পরিসংখ্যান সংখ্যাকে উপাত্তকে সরল করে এবং বিশ্লেষণে সাহায্য করে। কিন্তু উপাত্তের অন্তর্নিহিত পুরো তাৎপর্য এর দ্বারা অনুধাবন সম্ভব নয়। কারণ, পরিসংখ্যান কোনো বিশেষ ঘটনাকে কেবল একটি পদ্ধতির সাহায্যে পর্যালোচনা করে না।

৯. জ্ঞান ও সতর্কতার অভাবঃ

যথেষ্ট সতর্কতার সাথে পরিসংখ্যানিক তথ্য নিয়ে কাজ করতে হয়। পরিসংখ্যানে ভালো জান ও অভিজ্ঞতা না থাকলে পরিসংখ্যানিক তথ্য নিয়ে কাজ করা যায় না।

১০. ভ্রাভিজনক সিদ্ধান্ত:

পরিসংখ্যান অনেক ক্ষেত্রে ভ্রান্তি জনক সিদ্ধান্তের দিকে পরিচালিত করে। একই জাতীয় দুটি ঘটনার বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় পরিসংখ্যানের ফলাফল একই রূপ হতে দেখা যায়। যেমন-৩০, ৫০ এবং ৭০ সংখ্যা তিনটির গড় ৫০। আবার ৪৫, ৫০, ৫৫ সংখ্যা তিনটির গড় ৫০। কিন্তু চলকদ্বয়ের গঠন রীতি পৃথক।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, পরিসংখ্যান উপরিউক্ত সুবিধাগুলো দ্বারা সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। পরিসংখ্যানে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা দক্ষতার সাথে দূর করার মাধ্যমে একে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়। বাস্তবক্ষেত্রে যে কোনো সিদ্ধান্তের প্রাক্কালে যে কোনো ব্যক্তিকে পরিসংখ্যানের উল্লিখিত সীমাবদ্ধতাগুলো অনুধাবন করা উচিত। কিন্তু বর্তমানে পরিসংখ্যানের ব্যাপক ব্যবহার এই সীমাবদ্ধতাকে অনেকাংশেই অতিক্রম করেছে।

No comments:

Post a Comment